ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন অহমেদ
অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন অহমেদ
অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আচরণ বিজ্ঞানে মানুষের আচরনের কারণ সম্পর্কে নানা রকম মতবাদ বা তত্ত্ব রয়েছে Immanuel Kant মনে করতেন মানুষ কোন কাজটা করবে আর কোন কাজটি করবে না তা নির্ধারিত হয় মানুষের Moral Resorce বা নৈতিকতা দ্বারা। তার এই ধারণাটি একটি সার্বজনিন ধারণা যা স্থান বা কালের উপর নির্ভর করেনা পরবর্তীতে Theodor Adorno বা এই Concept ধারণাতে একটু পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সমাজ কিছু আচরণ বর্জন এবং কিছু আচরণ গ্রহণ করে। সমাজ বলে যে, এই কাজগুলো গ্রহগণযোগ্য এবং কিছু আচরণ গ্রহণ করে। Adorno এর মতে নৈতিকতা স্থান কাল ভেদে পরিবর্তন হতে পারে। এক স্থানে যে কাজ স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য অন্য স্থানে সে কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয় হতে পারে। তাছাড়া একটি সমাজে আজ যে কাজটা নিন্দনীয় ভবিষ্যতে সেই একই কাজ প্রশংসনীয় হতে পারে। এই আপেক্ষিক নৈতিকতাকেই তিনি মানুষের আচরণের নির্ধারক হিসেবে বর্ণনা করেন।
পরবর্তীতে বলা হলো যে, মানুষ দুটো সহজাত প্রবৃত্তি (Instinct) দ্বারা পরিচালিত হয়। একটি হলো Egoism এবং অপরটি হলো Altruism। Hednison থেকে অদ্ভুত Egosim এর মূল ধারণা হলো মানুষের ব্যাক্তি জীবনের প্রধান লক্ষ্য সুখবোধ, ব্যীক্তসুখ। একারণে মানুষ সাধারণত ব্যক্তি কেন্দ্রিক। এক উদাহরণ হচেছ মানুষ নিজ স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ইত্যাদি মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। নিজ সুবিধা, ভোগ-বিলাস, বিনোদন ইত্যাদির প্রয়োজনে যে কর্মকান্ড তাও মানুষ ঐ ব্যক্তিসুখের কারনেই করে থাকে। কিন্তু দেখা যায় যে, নিজের সকল প্রয়োজন মেটানোর পরও মানুষের ভেতর একধরনের শূন্যতা কাজ করে।
এই শূন্যতা পূরণে সে অপরকে সাহায্য করতে চায়। এই মতবাদকে বলা হয়। (Altruism) এর আওতায় মানুষ নিজের স্বার্থের বাইরে গিয়ে কাজ করে। নিজের বাইরে প্রথমে সে উপকার করে নিজের সন্তান, পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের। পরিবারের গন্ডির বাইরে সে সাহায্য করে সে নিজ সম্প্রদায়কে। এই সম্প্রদায় ধর্মীয়, ভৌগলিক,শ্রেণীগত, পেশাগত হতে পারে। এই মনস্তান্ত্বিক অবস্থানের ধারাবাহিকতায় মানুষ যখন নিজের পরিবার, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের বাইরে গিয়ে দেশের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করল তখন সূত্রপাত ঘটল Volunteerism এর যেটাকে বাংলায় আমরা বলি স্বেচ্ছাসেবা।
বিংশ শতাব্দিতে আমরা এই Volunteerism এর সাংগঠনিক রূপ দেখতে পাই। ১৮৫১ সালের আগ পর্যন্ত Volunteerism এর যে রূপটি আমরা দেখতে পাই তা Militaristic বা সামরিক বৈশিষ্ট্যের Peace Crops এর উদাহরণ । তখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদান করত মানুষ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলন, গৃহযুদ্ধ, প্লেগের প্রাদুর্ভাব, জমি হতে উৎখাত, দুর্ভক্ষ, বন্যা, মহা মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এগুলো মোকাবেলা করার জন্য বেসামরিক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভ্নি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় সাহায্য সহায়তা করার জন্য Volunteerism এগিয়ে এল। Volunteerism দের বলা হল(Angels of the Battle field) ।
১৮৮১ সালে গঠিত হলো Red Cross । ১৮৬৫ সালে Salvation Army গরীবদের আধ্যাত্তিক মুক্তির উপায় হিসেবে বাসস্থান, কর্মসংস্থান, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি চাহিদা পুরণেরউপর গুরুত্বারোপ করলো। শুরু করল রেশন ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করল। বাসা থেকে কাপড় নিয়ে বিতরণ করল গরীবদের। এ ধরনের সংগঠনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল এরা অলাভজনক ও স্বেচ্ছাশ্রম দ্বারা পরিচালিত। ১৯৬৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট Linder ‘B’ Johnson দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশে দারিদ্র বিমোচনে সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।
স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজ কল্যাণ- সমাজের কল্যাণে শ্রম দেয়া। এই কার্যক্রম জনমত গঠনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজ পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো হলো ভৌগলিক অবস্থান, প্রযুক্তি, জৈবিক বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতি প্রথাগত নিয়ম ও আচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। সাধন সম্ভব । আর এর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনেও Volunteerism ভূমিকা রাখতে পারে।