ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেমঃ একটি গল্প ও কিছু কথা

জেডইউএম বাবর আলী
গবেষক
চিন্তার চাষ

আমার মনে যে প্রশ্ন ছোটবেলা হতে কাজ করে তা হলো কোন জিনিসগুলো মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি সাদামাটাভাবে বলি তাহলে ধর্ম, অর্থ আর যৌনতা। এই তিনটি জিনিসের মধ্যে অর্থ আর ধর্ম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় অন্য মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আর যৌনতা হোল মানুষের জৈবিক চাহিদা, যার সাথে মনস্তাত্ত্বিক একটি সম্পর্ক রয়েছে। আজকের এ আলোচনা সে বিষয়ে নয়। বাকি রইল অর্থ ও ধর্ম। ধর্ম নিয়ে সারা বিশ্বে অনেক আলোচনা হচ্ছে কে আস্তিক কে নাস্তিক ইত্যাদি। যেহেতু ধর্ম বিষয়ে কম-বেশি সবাই জানে তাই সে বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করে আমি মানুষকে আর বেশি বিভ্রান্ত করতে চাইনা। যে বিষয়টি সাধারণ মানুষ খুব কম আলোচনা করে কিন্তু তা আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রণালীকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে বিষয়টিই আজকের আলোচ্য বিষয়। আর তা হলো অর্থ। অর্থকে পুঁজিবাদী সমাজে বলা হয় দ্বিতীয় ঈশ্বর। প্রথম ঈশ্বরের ক্ষমতা সম্পর্কে আস্তিক বা নাস্তিকদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও এই দ্বিতীয় ঈশ্বর নিয়ে কোন বিরোধ নেই। অর্থকে বলা হয় সভ্যতার রক্ত। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হোল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই এই দ্বিতীয় ঈশ্বর সম্পর্কে কোন প্রশ্ন নেই। এই দ্বিতীয় ঈশ্বরকে তারা অন্ধের মতো অনুসরণ করে যাচ্ছে। শিক্ষিত, মূর্খ, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবি সবাই যেন এই দ্বিতীয় ঈশ্বরকে (অর্থ) কোন কিছু না বুঝে শুধু অনুসরণ করতে চায়। আমি যদি মাস্টার্স পাস কোন সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্রকে প্রশ্ন করি মহা বিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হলো, উত্তর আসবে বিগব্যাং এর মাধ্যমে। যদিও বিগব্যাং পদার্থ বিজ্ঞানের বিষয়, তার বিষয় নয় এবং এই বিগব্যাং তত্ত্ব সম্পর্কে না জানলেও তার জীবন অপূর্ণ থাকতোনা, কিন্তু তবুও সে জানে। যদি প্রশ্ন করি অর্থ কোথা থেকে আসে? অর্থাৎ বাজারে কে অর্থ তৈরি করে তা হলে খুব কম মানুষই বলতে পারবে যে, আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেম অর্থ তৈরি করে এমনকি অধিকাংশ মানুষের অর্থ তৈরী সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। আমি বলবনা অর্থ কোথা হতে অঅসে এটা না জানাটা অজ্ঞতা। আমরা এ বিষয়ে জানিনা কেননা কোন গণমাধ্যমে বা কোন কুইজ প্রতিযোগিতায় এই প্রশ্নটা কাউকে করা হয়নি। আর এই অর্থ আমাদের জীবনে যত প্রয়োজনই হোক না কেন, এর প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের জানার তেমন আগ্রহ নেই।

আসলে অর্থ কোথা হতে কিভাবে হতে কিভাবে তৈরি হয় তা জানতে হলে আমাদের সুদূর অতীতে যেতে হবে যেখান হতে আজকের কাগজে তৈরি অর্থের আবিস্কার হলো। সুদূর অতীতে মানুষ ঝিনুক, পোড়ামাটি, অলঙ্কার করা কাঠ, লবন, তামাক যখন যেটাকে বিনিময় মাধ্যমে হিসেবে উপযুক্ত মনে হয়েছে তখন সেটাকে অর্থ হিসেবে ব্যবহার করেছে। তবে যে জিনিসটা কাগজকে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে জায়গা করে দিযেছে তা হলো স্বর্ণ আর রোপ্য । মধ্যযুগে মানুষ বিনিময় মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ অর রৌপ্য ব্যবহার করতো। যেহেতু স্বর্ণ খুব ভারী এবং ডাকাত ও চোরের ভয়ে এটা স্থানান্তর করতে অনেক কষ্ট পোহাতে হতো সেহেতু এই কষ্টকর অবস্থা হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য গোল্ডস্মিথদের কাছে স্বর্ণ জমা রাখতো এবং তার বিনিময়ে একটি কাগজের রশিদ নিতো। গোল্ডস্মিথ বিনা লাভে এই কাজ করতো না।  তিনি এই কাজের জন্য একটা বিনিময় নিতেন। তখনকার দিনে লোকজন এই কাগজের রশিদ নিজের কাছে রাখতো এবং যখন প্রয়োজন হতো গোল্ডস্মিথদের কাছে গিয়ে রশিদ দেখিয়ে স্বর্ণ নিয়ে যেতো। আস্তে আাস্তে মানুষ অবিস্কার করলো তারা তো এই রশিদ দিয়ে কেনা বেচা করতে পারে।  তাই লোকজন এই গোল্ডস্মিথ এর রশিদ দিয়ে কেনাবেচা শুরু করলো। এই সুন্দর সিস্টেম হতে একটা জাদুকরী আইডিয়া আবিস্কার করল। সে দেখল খুব কম মানুষই স্বর্ণগুলো ভল্ট হতে নিতে আসতো। সুতরাং সে চিন্তা করলো, সেতো ইচ্ছে করলেই কাগজের রশিদ লিখে মানসুষকে ঋণ দিতে পারে। যা চিন্তা তাই কাজ। গোল্ডস্মিথ কাগজের ঋণ দেয়া শুরু করলো। এ থেকে তার ভালো আয় হলো। যদিও লোকজন তার কাছে যে স্বর্ণ রেখেছিল তার জন্য প্রত্যেক মালিককে একটি করে রশিদ দিয়েছে তথাপি সে নতুন কিছু ভূয়া রশিদ তৈরি করল এবং মানুষকে এই রশিদগুলো দেওয়া শুরু করলো এবং বলল এর বিপরীতে তার কাছে স্বর্ণ আছে। আর আধুনিক ব্যাংকিং  সিস্টেমের বাইবেল এই ধূর্ত গোল্ডস্মিথের মাথা হতে জন্ম নিল। অর্থাৎ তার কাছে যেটুকু স্বর্ণ ছিল তার চেয়ে বেশি রশিদ দেয়া শুরু হলো। গোল্ডিস্মিথের এই রশিদ দেয়ার ক্ষমতা সমাজে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করল। আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেম এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতি ব্যবস্থায় টাকা তৈরি করে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে ব্যাংক একটি প্রতিষ্ঠান যা মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে সেই টাকা অন্য মানুষকে ঋণ দেয়। কিন্তু আসলেই কি তাই করে? The Mystery of Banking বইতে ব্যাংকের সেই রহস্যই উন্মোচন করা হয়েছে। সাধারণভঅবে এ বিষযটিই Fractional Reserve System এর মূল তত্ত্ব। অর্থাৎ আপনার কাছে যে রিজার্ভ রয়েছে আপনি তার চেয়ে বেশি কাগজের রশিদ মানুষকে দিচ্ছেন। আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেম এই পদ্ধতিটাই ব্যবহার করে বাজারে টাকা তৈরি করে।

Fractional Reserve System সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার আগে আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই। প্রতি বছর মুদ্রাস্ফীতি হয অর্থাৎ মুদ্রা যে ক্রয় ক্ষমতা হারায় সে ক্রয় ক্ষমতা কোথায় যায়? পানির আবর্তনচক্র বা Water Cycle সম্পকেৃ চিন্তা করলেই এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আমাদের জন্য সহজ হবে। এই সাইকেল একটি ক্লোজড সিস্টেমে আবদ্ধ অর্থাৎ এই সাইকেলের কোন এক জায়গায় পানি কমলে অন্য জায়গায় পানি বারে। ঠিক তেমনি Fractional Reserve System ব্যবস্থা ও একটি ক্লোজড সিস্টেমের মধ্যে কাজ করে যেখানে কোন একজনের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। অর্থাৎ প্রতি বছর আমাদের মুদ্রায় যে ক্রয় ক্ষমতা কমে নিশ্চয়ই এই ক্রয় ক্ষমতা কেউ পাচ্ছে। আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।

অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর অনেকে অনেকভাবে দেবে। তবে সেইসব জিনিস শেষ পর্যন্ত দুটো জিনিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত অর তা হলো সম্পদ এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত কাগজের অর্থ। মুদ্রাস্ফীতির যতগুলো কারণ তুলে ধরা হোক না কেন তা কোন না কোন ভাবে এই দুটোর অনুপাতকে সম্পাদিত করেই সম্পাদিত হয়। কেউ কেউ হয়তো বলবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি হয় অর্থৎ দ্রব্যের দাম বাড়ে। আসলেই কী তাই? ধরুন কোন দেশে দশ জন লোক আছে। এদের প্রত্যেকের কাছে এক টাকা করে আছে। আচ্ছা এখন যদি কোন পরিবারে একটি বাচ্চা জন্ম নেয় তাহলে লোক সংখ্যা হবে এগারো জন তাহলে কি দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাবে? আমার মনে হয়না। কেননা দ্রব্য যেমন বাড়েনি ঠিক তেমনই টাকাও বাড়েনি। তাই এখানে মুদ্রাস্ফীতির কোন সম্ভাবনা নেই। বরং যে ঘটনা টা ঘটবে তা হলো যে পরিবারে সে বাচ্চাটি জন্মগ্রহণ করেছে সে পরিবারকে এখন একই টাকার মধ্যে নিজেদের ব্যয় ও বাচ্চার দুধ কিনতে হবে। ফলে দুধের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুধের দাম একটু বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু দুধের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছে তাই পরিবারটি অন্য খাতে (যেমন চা খাওয়া) ব্যয় কম করবে। এক্ষেত্রে চায়ের চাহিদা কমায় এর দামও কমে যাবে। এখন যদি দুধের দাম এবং চায়ের দামের ক্ষেত্রে আমরা যোগ বিয়োগ করি তাহলে দেখা যাবে যে, মুদ্রাস্ফীতি শূন্য। আচ্ছা এই নতুন বাচ্চাটি বড় হলে কী ঘটবে? তখন কি মুদ্রা স্ফীতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে। বাচ্চাটি যখন বড় হবে সে তখন হয়তো ধান উৎপাদনে নিয়োজিত হবে। তাহলে কী হবে? ধানের যোগান বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কমে যাবে। কিন্তু অন্য যে পন্যগুলো সে ব্যবহারের প্রয়োজনে ক্রয় করবে সেগুলোর জাহিদা বেড়ে যাবে তাই দামও বেড়ে যাবে। ফলে সার্বিকভাবে মূদ্রাস্ফীতির কোন সম্ভাবনা নেই যদি দুটো বিষয় না ঘটে। এক পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় হঠাৎ করে যদি সমস্ত সম্পদের উৎপাদন কমে যায়; দুই বাজারে কেউ কাগজের টাকার অনুপ্রবেশ (Inflow) ঘটায়। কিন্তু আধুনিক মানব সভ্যতা তার বুদ্ধি এবং পরিশ্রম দিয়ে প্রতি বছর উৎপাদন বড়িয়ে চলছে। তবুও কেন মূদ্রাস্ফীতি ঘটছে? তাহলে নিশ্চয়ই কোন এক জায়গা হতে কৃত্রিমভাবে অনবরত মূদ্রার যোগান দেওয়া হচ্ছে যা মানব সভ্যতার উৎপাদনকেও অতিক্রম করে যাচ্ছে।  এটা কোন কোন জায়গা বা কে এই কাজটি করছে এই প্রশ্নের উত্তর The Mystery of Banking বইটিতে সুন্দরভাবে দেয়া আছে। লেখক Roothbard এর এই বই হতে কিছু অংশ বাংলায় অনুবাদ করে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ব্যাংকগুলো কিভাবে টাকা তৈরি করে তা বুঝতে হলে আমাদের Fanctional Reserve System সম্পর্কে আগে বুঝতে হবে। আচ্ছা ধরুন বাজারে একটি ব্যাংক আছে যা ব্যবসা করার জন্য খোলা হয়েছে। প্রথমে কাজল নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংকটি টাকা হিসেবে ৫০হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ডিপোজিট হিসেবে পেল এবং এর বিনিময়ে ঐ ব্যক্তি ব্যাংকটির নিকট হতে একটি ওয়ার হাউজ রশিদ পেল যেটা দিয়ে ব্যক্তিটি যে কোন সময়ে তার স্বর্ণ পুনরায় ফিরিয়ে নিতে পারবে। এর ফলে বাজারে কিন্তু কোন নতুন টাকার সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ব্যাংকটি সেই ধূর্ত গোল্ডস্মিথের মতো এই ৫০ হাজর টাকা মূল্যের স্বর্ণের বিপরীতে তার মালিককেতো ওয়ারহাউজ রশিদ দিলে- সাথে সাথে সে আরও একটি ৮০ হাজার টাকা মূল্যেও ওয়ার হাউজ রশিদ তৈরি করল এবং হানিফ নামের যে ব্যক্তি তার কাছে ঋণ নেয়ার জন্য গিয়েছিল তাকে সে ঐ টাকাটি ঋণ হিসেবে দিল। এখানে ব্যাংকটি ৮০ হাজার টাকার ওয়ারহাউজ রশিদ তৈরি করল যার বিপরীতে ব্যাংকে কোন স্বর্ণ নেই। সুতরাং বাজারে এখন ৫০+৮০=১৩০ হাজার টাকার ওযঅর হাউজ রশিদ ঘুরছে। এই পদ্ধতিটাই বাজারে মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি করল এবং মুদ্রাস্ফিতি ঘটালো।

ব্যাংকগুলো প্রতি নিয়তই এই Fractional Reserve System এর মাধ্যমে মুদ্রা বাজারে টাকার পরিমান বৃদ্ধি করে চলেছে। ব্যাংকের এই টাকা বৃদ্ধিতে কে লাভবান হচ্ছে আর কে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে? Fractional Reserve System এ ব্যাংক যে টাকাটা তৈরি করল তা প্রথমে যে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করল সে লাভবান হলো কেননা বাজার এখনও মুদ্রাস্ফীতি অনুভব করতে পারেনি। আস্তে আস্তে টাকাটা যত মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রব্যমূল্য সে অনুপাতে বাড়ছে। এই পদ্ধতিতে  সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে সীমিত আয়ের লোকগুলো। অর্থাৎ যারা চাকুরী জীবি বা দিনমজুর। Fractional Reserve System কে অনেক সময় লুকাকিত করা বা (Hidden Tax) বলা যায়। এই সিস্টেমের আওতায় সবচেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে সীমিত আয়ের ও দরিদ্র লোকদের। এই সিস্টেমের মাধ্যমে আসলে যে সম্পদ তৈরী হয় তা ব্যাংক এবং কর্পোরেট মালিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ও ধীরে ধীরে ব্যাংক ও কর্পোরেট ধনিদের কাছে স্থানান্তরিত হয় আমাদের চোখের অগোচরে। আর এই আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমরা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে প্রতিনিয়ত বৈষম্য বাড়তে দেখি। Fractional Reserve System আর একটা ঘটায় যাকে ইউরোপিয়ানের বিজনেস সাইকেল বলে অবহিত করে। যখন ব্যাংক ঋণ দেয় তখন বাজারে টাকার আধিক্যেড় কারণে কর্মোচাঞ্চল্য ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়ীরা যখন ব্যাংক হতে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে তখন অর্ধেক সংকোচন হয় এবং মন্দা ঘটে । ব্যাংকগুলো গত শতাব্দি ধরে Fractional Reserve System এর মাধ্যমে টাকা তৈরি করে যাচ্ছে শূণ্য হতে এবং এটি তারা করছে প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ সমর্থনে এবং তার অধীনে থেকে।

ব্যাংকগুলো Fractional Reserve System এর মাধ্যমে সম্পূর্ন শূন্য হতে কী পরিমান টাকা তৈরি করে তা Kalinda Rose Stevenson তাঁর একটি আর্টকেলে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন (www.ezineasticles.com/? How banks create money out of thin Air bid=94796)। তার সেই আর্টিকেলে উনি লিখেছেন ব্যাংক জানে কিভাবে শূন্য হতে টাকা তৈরি করতে হয়। ব্যাংক মূলত নতুন টাকা তৈরি করে যা পূর্বে ছিলনা। তিনি একটি উদাহর দিয়ে তা ব্যাখ্যা করেছেন । ধরেন আপনি ১ লক্ষ্য  ডলার ১ বছরের জন্য কোন ব্যাংকে রাখলেন ৫% সুদে। এখন ব্যাংক আপনার টাকাকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন টাকা তৈরি করবে। ধরুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আইন অনুসারে রিজার্ভ রেট হতে পরে ৩% থেকে ১০% অথবা আরো কম বা বেশি। ৩% রিজার্ভ রেট মানে হলো ব্যাংকটিকে অবশ্যই ১ লক্ষ্য ডলারের ৩% রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি ৯৭% ব্যাংকটি ঋণ দিতে পারে। ১০% রিজার্ভ রেট মানে হলো ব্যাংকটিকে মূল টাকার ১০% রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি ৯০% ঋণ দিতে পারবে। উদাহারনের জন্য আমরা ধরে নেই ১০% রিজার্ভ রেট আইন অনুসারে ব্যাংক মুল ১ লক্ষ্য ডলারের ১০% রিজার্ভ রেখে বাকি ৯০ হাজার ডলার ব্যাংক কাউকে ঋণ দিতে পারে। সুতরাং ৯০ হাজার ডলার কাউকে ঋণ দিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যদিও ব্যাংক ৯০ হাজার ডলার ঋণ দিয়েছে এটা আবার তাঁর সম্পদ হিসেবেও খাতায় দেখানো হয়। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ৯০ হাজার ডলার নতুন টাকা তৈরি করল সম্পূর্ণ শূন্য হতে কিন্তু এই পদ্ধতিটা এখনই বন্ধ হচ্ছেনা। যেহেতু ৯০ হাজার ডলার ব্যাংক ঋণ দিয়েছে এবং এটা তার সম্পদ হিসেবে প্রদর্শিত হযেছে তাই এর ৯০% অর্থাৎ ৮১ হাজার ডলার আবারও ব্যাংক অন্য কাউকে ঋণ দিল। এভাবে ঋণ দিযে ব্যাংক পুনরায় সম্পদ তৈরি করল যা আগের তুলনায় ১০% কম অর্থাৎ ৮১ হাজার ডলার। যেহেতু ব্যাংক- এর ঋণ দেয়া টাকা অর্থাৎ ৭২ হাজার ৯০০ ডলার ঋণ দিলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন ব্যাংকটিকে মূল টাকা হতে ৫ থেকে ৬ বার ঋণ দেয়ার অনুমতি দেয়। তাহলে অমরা দেখি ব্যাংকে আসলে কত টাকা তৈরি করল? আপনি ব্যাংকে যে ১ লক্ষ ডলার রেখেছিলেন তা হতে ব্যাংক (৯০+৮১+৭২.৯)=১৪৩.৯০ হাজার ডলার বাজারে সৃষ্টি করল।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক মানুষ আমরা সব জানি,আমরা আমাদের মানবতা, আমাদের লব্ধ জ্ঞান আর চারদিকের তথ্য দিয়ে সব কিছু মাপি। আর ছোটবেরা হতে আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সব ভালো কিছু আমরা দেখে আসছি। আসলেই কী ব্যাংকগুলো মানব সভ্যতার সাথে এই চাতুরিগুলো করে, না এই সবগুলোই মিথ্যা। কেননা সম্পূর্ণ খোলা দৃষ্টিতে আমিতো ব্যাংকের মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনা। পরক্ষনেই মনে হয় আমরা যা দেখি তার সব তো সত্য নয়। যেমন আমরা দেখি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। যদি আমি পড়াশোনা না করতাম তাহলে পৃথিবীর কেউ আমাকে কখনও বুঝাতে পাতোনা যে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে। আমি আমার চোখে দেখাকে কিভাবে অবিশ্বাস করব? আমাকে কেউ কিভাবে বোঝবে যে, আসলেই পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে।  মানুষ যা চোখে দেখে প্রকৃত সত্য তার সম্পূর্ণ বিপরীতও হতে পারে।  তাই যা দেখি তার সবটা কি সত্যি? আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেম সম্পর্কেও আমার সেই একই প্রশ্ন।

Share This