নিবর্তনের আবর্তন চক্র

শেখ মুহাম্মদ মেসবাহ্‌ আর রহমান
নির্বাহী পরিচালক
চিন্তার চাষ

প্রকৃতির এক অদ্ভুত নিয়মের কথা ১৯৭৯ সালে Professor James Lovelock তাঁর বিখ্যাত Gaia Hypothesis এ উল্লেখ করেছেন। এই Hypothesis অনুযায়ী পৃথিবীর একটি স্বয়ংক্রিয় জটিল ব্যবস্থা রয়েছে যা পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রকৃতির জৈব ও অজৈব উপাদানের মিথস্ক্রিয়ায় পরিবেশগত পরিবর্তন এমনভাবে প্রশমিত হয়, যার ফলে পৃথিবী জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারেনা। এই Hypothesis অনুযায়ী পরিবেশ দুষণের ফলে পৃথিবীতে জীবনের বসবাস সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও চুড়ান্তভাবে প্রকৃতি নিজকে এমনভাবে পরিবর্তিত করবে যার ফলে পৃথিবী জীবন ধারনের উপযোগী হবে। প্রাকৃতিক এই নিয়ম প্রকৃতির ভাঙ্গা-গড়ার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতিতে সুন্দর আগামী ঘোষণা দেয়।
সামাজিক বিজ্ঞান ও আচরণ বিজ্ঞানের আধুনিকতম বিকাশে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রের প্রয়োগ ঘটছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র সামাজিক বিজ্ঞানের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে।
মানব সমাজে কালের বহমানতায় যে, সৃজন-বিনাশের আবর্তন ঘটে তার সামষ্টিক দর্শন মানুষকে বর্তমান সম্পর্কে সচেতন করে আর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করে। এই আশাবাদ শুধুমাত্র সুন্দর সমাজ গঠনে অংশীদারদের জন্য। স্থান-কাল নির্বিশেষে এদের লড়াই কখনও ক্ষয়িষ্ণু সমাজ বিনাশের, আবার কখনও স্বর্ণালী সমাজের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার। সভ্যতার স্বর্ণালী অধ্যায়ে এরা আত্মতৃপ্ত হয়না। মানবতার নির্মম অবদমনে এরা হতাশ হয়না। ফলে অপশক্তির অপপ্রয়াসের বিপরীতে নবসৃষ্টির আয়োজন চলে প্রকৃতির সামাজিক নিয়মেই।
অবহেলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিপন্ন মানবাধিকার, অশিক্ষার আধার, চিন্তা ও বিবেকের শৃঙ্খল, যুক্তির চর্চাহীনতা, সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা পরিবেশের উপর নৃশংস অত্যাচার কোন সমাজের স্থিতিশীল চিত্র হতে পারেনা। প্রাকৃতিক নিয়মেই তারুণ্যের চিরস্বাধীন চিত্ত, মুক্ত বোধ এবং জাগ্রত বিবেকের স্পর্ধিত প্রয়াসে উত্তরণ ঘটবে সামাজিক দৃশ্যপটের। নব-উষার রক্তিম বাস্তবতায় বিলিন হবে আঁধার।

Share This